আমরা কিভাবে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র পালন করব এবং তা কোন দিন?

LAILATUL QADAR (3)প্রশ্ন : আমাদের লাইলাতুল ক্বাদ্‌র কিভাবে পালন করা উচিৎ? তা কি সালাত আদায় করার মাধ্যমে নাকি কুরআন তিলাওয়াহ, রাসূলের সীরাহ পাঠ, আদেশ উপদেশ দেওয়া/শোনা ও মাসজিদে অনুষ্ঠান উদযাপন করার মাধ্যমে পালন করতে হবে?

উত্তর : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশদিন এমনভাবে সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াহ ও দো‘আ পাঠের মাধ্যমে মনোনিবেশ করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না। ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে ইমাম আল-বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে (রমযানের) শেষ দশরাত্রি শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জাগতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকেও জাগাতেন এবং স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত থাকতেন।

আহমাদ এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে :
“তিনি শেষ দশদিন এমনভাবে মনোনিবেশ করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।”

দ্বিতীয়ত:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদাত করতে উৎসাহিত করেছেন। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«من قام ليلة القدر إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه»
“ঈমানের সাথে ও প্রতিদানের আশায় যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে জেগে ক্বিয়াম করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম]

আর এই হাদীসে লাইলাতুল ক্বাদরে রাত জেগে ক্বিয়াম করার শারী‘আতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে।

তৃতীয়ত:
লাইলাতুল ক্বাদরে সবচেয়ে ভালো দো‘আসমূহের মধ্যে একটি পাঠ করা যায় যা ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। আত-তিরমিযী এটি ‘আয়েশাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন এবং একে সহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন :
আমি বললাম, “হে রাসূলুল্লাহ যদি আমি জানি কোন রাতে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র তবে আমি সেই রাতে কি বলব?”

তিনি বললেন, বল:
«اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني »
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা ‘ফুউ ‘আন্নী”
(হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।)”[5]

চতুর্থত:
রমযানে লাইলাতুল ক্বাদরের রাত ঠিক কোনটি, এটি জানার জন্য বিশেষ সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন আছে, কিন্তু শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলো অন্যান্য রাতের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এবং সাতাশতম রাত (শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে) লাইলাতুল ক্বাদ্‌র হওয়ার ব্যাপারে বেশি সম্ভাবনাময়। যেমনটি আমরা এ ব্যাপারে নির্দেশ করে এমন হাদীসগুলো উল্লেখ করেছি।

পঞ্চমত:
আর বিদ‘আত (দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রবর্তিত বিষয়) কাজসমূহ, তা কখনই রমযান বা রমযানের বাইরে কোনো সময়েই জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন :
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد»
“যে আমাদের এই বিষয়ে (শারী‘আতে) নতুন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

অন্য এক বর্ণনায় আছে,
«من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে কোন কাজ করল যা আমাদের বিষয়ের (শারী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

আর রমযানের কিছু নির্দিষ্ট রাতে অনুষ্ঠান উদযাপনের ব্যাপারে কোন ভিত্তি আমাদের জানা নেই। সবচেয়ে ভালো পথ-নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথ এবং সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে (শারী‘আতে) নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ (বিদ‘আত)।
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।

গবেষণা ও ফাত্‌ওয়া ইস্যুকারী আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ (১০/৪১৩)

Islam Q & A থেকে মূল প্রশ্নোত্তরটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

This entry was posted in সিয়াম ও রামাদ্বান সম্পর্কিত and tagged , , . Bookmark the permalink.

3 Responses to আমরা কিভাবে লাইলাতুল ক্বাদ্‌র পালন করব এবং তা কোন দিন?

  1. আবু যায়েদ বলেছেন:

    আলহামদুলিল্লাহ্।আহমাদ মুসা ভাই, শেষ দশকের বেজুড় রাত্রিতে তারাবী এবং বিতর সালাত জামাতে আদায় করার পর পরে আরও সালাত আদায় করা যাবে? বিস্তারিত দ্রুত জানালে খুশি হব। যেহেতু শেষ দশক চলে এসেছে।

    • আহমাদ মুসা বলেছেন:

      আলহামদু লিল্লাহ , আবু যায়েদ ভাই । মহান আল্লাহ আপনার জানার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন । আমীন
      জ্বি ভাই , লাইলাতুল ক্বাদরের রাত্রিগুলিতে আপনি মাসজিদে তারাবীহ স্বালাত জামা’আতে আদায় করা পর আরও স্বালাত একা একা আদায় করতে পারবেন । কারণ রাতের স্বালাতকে নাবী (সাঃ) নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে বেঁধে দেননি । রাসূল (সাঃ) বলেছেন : রাতের স্বালাত দুই দুই রাকাত করে । সুতরাং আপনি দুই দুই রাকা’আত করে আপনার সাধ্য মত পড়তে থাকুন । কুরআন তিলাওয়াত , যিকির , দু’আ ইত্যাদি করতে থাকুন । তবে ছোট সুরা দিয়ে স্বালাতের রাকা’আত সংখ্যা না বাড়িয়ে স্বালাতের দৈর্ঘ্য বাড়ানো বেশি ভাল । দরকার হলে , একই সূরা আপনি বারবার পড়তে পারেন একই রাকা’আতে । রুকু সিজদার তাসবীহের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন । আশা করি বুঝতে পেরেছেন । মহান আল্লাহ আমাদের লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার এবং তার ফায়দা পুরোপুরি হাসিল করার তাওফীক্ক দান করুন । আমীন !

  2. আবু যায়েদ বলেছেন:

    আমীন!

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান